বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১০ পূর্বাহ্ন
লক্ষ্মীপুরে কমলনগরে হাত বাড়ালেই মিলছে মরণব্যাধি ইয়াবা!
আব্বাস উদ্দিন, লক্ষ্মীপুর সদর ক্রাইম প্রতিনিধি :// ঢাকার কন্ঠ
লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার প্রায় বিভিন্ন এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে মরনব্যধি ইয়াবা। ইয়াবার নেশায় ডুবে যাচ্ছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণীর হাজারো মানুষ। এ তালিকায় রয়েছে উঠতি বয়সী যুবসমাজ, স্কুল ও কলেজ ছাত্র, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এতে করে উপজেলায় ইয়াবা সহ অন্যান্য মাদকাসক্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। যার ফলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইভটিজিং, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও বখাটেপনা বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগায় ইয়াবা বিক্রি ও সেবন হলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। দিনের পর দিন প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা চলে আসার কারণেই পুরো উপজেলা জুড়ে এখন ইয়াবায় সয়লাব হয়ে আছে। মামলায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদেরকে আদালতে চালান দেওয়ার কিছু দিন পরে জামিনে এসে পুনরায় ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দুর্বলের কারণে আসামিরা ছাড়াও পেয়ে যায়।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন, গ্রাম, মহল্লা, হাট-বাজার ঘুরে ইয়াবা বিস্তারের ভয়াবহতার চিত্র পাওয়া গেছে। আগে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ইয়াবা বেচাকেনা হলেও এখন তা আর নির্দিষ্ট কোনো স্থানে নেই। ‘কল অন কমলনগরে ডেলিভারি’তে ইয়াবা মিলছে সর্বত্র। সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেই চলে ইয়াবার কেনাবেচা। বিক্রেতাদের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে স্থানের কথা বললেই পৌঁছে দেওয়া হয় মরণনেশা ইয়াবা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, এই উপজেলায় কমপক্ষে ২০ -২৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছে। তা ছাড়া মাদকের ব্যবসায় লগ্নি আছে বেশ কয়েকজনের। মূলত প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির টাকায় কেনা হয় মাদক। আর ডেলিভারি ম্যানের সাহায্যে মাদক বিক্রয় হয় কমলনগররের বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে।
গোপন সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদর হাজির হাট বাজারের তালপট্রি রাশেদ বিল্লাহ আলমগীর সাবেক চেয়ারম্যান এর বাসার সামনে, চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের পাশে, উত্তর বাজার তোয়া সৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে রাতের বিক্রয় ও সেবন চলে, দক্ষিন বাজার আলী হোসেন মিয়ার বাড়ির দরজার বাগানে বিক্রয় ও সেবন চলে, চর জগবন্ধু মেঘনা নদীর পাড়ে, চর লরেন্স বাজার ইউনিয়ন পরিষদের পাশে, তোরাবগঞ্জ পশ্চিম বাজার, হাজির হাট – করুনগর মধ্যেবর্তী আঞ্চলিক মহাসড়কে পোরকানিয়া ও আন্ধার ঘর নাম স্হানে, করুনগর পূর্ববাজারে সিনেমা হলের পাশে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ইয়াবা।
অপরদিকে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে ইয়াবা ব্যবসা চলে এমন অভিযোগও রয়েছে। ফলে উপজেলায় ইয়াবার ছড়াছড়ি হলেও ইয়াবা ব্যবসায়ীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। মাঝে মাঝে পুলিশ অভিযান করে কিন্তু সিন্ডিকেট এর আসল ব্যবসায়ীরা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইয়াবাসেবীর সংখ্যা এবং এ নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুল, কলেজের তরুণ ছাত্ররা। যার ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলঙ্গীর হোসেন দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমার থানা এলাকায় স্পট সৃষ্টি করে কেউ ইয়াবা বিক্রি করে না, তবে কিছু কিছু ভ্রাম্যমান বিক্রেতা থাকতে পারে, তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হবে। গত তিন মাসে ৪টি মাদকের মামলায় ৪ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি মাদকের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, গত ২২শে ফেব্রুয়ারি ইয়াবা সম্রাট সিরাজ মেম্বারকে ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সে বর্তমান জেলা কারাগারে রয়েছেন। মাদকের বিষয়ে সঠিক তথ্য পেলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। অভিযান এখনো চলমান রয়েছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, মাদকের ব্যাপারে কোনো ছাড় নাই। উপজেলা থেকে মাদক নির্মূল করতে আমাদের ভ্রাম্যমান আদালত ও পুলিশের অভিযান চলছে।